ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

আলিকদম পোয়া মুহুরী টাইটং পাহাড়-ছেদাবুরং পথে

বান্দরবান সীমান্তের পাহাড়ি এলাকা ইয়াবা পাচারের নিরাপদ রুট

নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান::
বান্দরবান জেলার সীমান্তের পাহাড়ি এলাকা দিয়ে ইয়াবার চালান ঢুকছে বাংলাদেশে। প্রশাসনের তেমন নজরদারি না থাকায় দুর্গম পাহাড়ি এলাকা ইয়াবা পাচারের নিরাপদ রুট হিসাবে বেছে নিয়েছে পাচারকারীরা।

র‌্যাবের সিনিয়র সহকারি পরিচালক নিয়াজ মোহাম্মদ চপল জানান, বেশ কিছুদিন ধরে র‌্যাবের কাছে খবর আসছিলো থানচির সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবার চালান ঢুকছে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার বান্দরবান সদর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরের থানচির বলিপাড়ার আইলমারা ঝিরি স্টিলব্রিজ এলাকা থেকে নিয় চি মং মারমা নামে এক উপজাতি যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছে থাকা একটি স্কুল ব্যাগ থেকে ৫০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব জানিয়েছে-নিয় চি মং মারমা এলাকায় প্রভাবশালী। তাঁর বাড়ি সীমান্ত এলাকা রেমাক্রি ইউনিয়নের বড় মদক এলাকায়। তিনি রেমাক্রি ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। নিয় চি মং ইয়াবার চালনা নিয়ে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর পাড়ার লোকজন অনেকটা হতবাক।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে রেমাক্রি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুই সে তুই মারমা জানান, নিয় চি মং মারমা ২০১৬ সালে ইউনিয়নের পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। তার গাছের বাগান ও জুম চাষ রয়েছে।তিনি ইয়াবা পাচারে কিভাবে জড়িয়ে পড়লো বুঝতে পারছি না।

চেয়ারম্যান মুই সে তুই বলেন, বড় মদক এলাকাটি বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা। এর আগে কখনো এ এলাকায় ইয়াবা নিয়ে কেউ ধরা পড়েনি। নিয় চি মং ধরা পড়ার পর আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, সীমান্তের ৫৮ নম্বর পিলারের আলিকদম পোয়া মুহুরী টাইটং পাহাড়, ছেদাবুরং পাড়া এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকছে। উদ্ধার হওয়া ইয়াবাগুলো ওই এলাকা দিয়ে আনা হয়েছে। শঙ্খ ও মাতামাহুলী নদীর ৫৮ নম্বর পিলার এলাকাটির বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার অংশ ¤্রাে অধ্যুষিত। ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তল্লাশি চৌকি রয়েছে। ওই এলাকার পাড়া কারবারিদের নিয়ে দুই একদিনের মধ্যে বৈঠক করবো। ওই এলাকা দিয়ে ইয়াবা পাচার ঠেকাতে আমরা প্রয়োজনে পাহারা দেব।

গত বছরের অক্টোবর মাসে বান্দরবানের আলি কদম এলাকা থেকে পাঁচ লাখ ইয়াবাসহ দুই ইয়াবা পাচারকারিকে গ্রেপ্তার করেছিল। গ্রেপ্তার দুইজন হলেন, মো. মনির (২৩) ও মো.সাইফুল ইসলাম (১৯)। তারা র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জানিয়েছিলো সীমান্তের আলিকদমের বুচিডং এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে তারা ইয়াবাগুলো এনে সদর ইউনিয়নের উত্তর পালং পাড়া এলাকায় একটি বসতঘরে মজুদ করেছিলো।

২০ পয়েন্টে আসছে ইয়াবা: বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের টেকনাফ ও উখিয়ার সাগর পথে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। সীমান্তের বান্দরবান জেলার বিশটি পাহাড়ি পথ দিয়ে মিয়ানমার থেকে আনা ইয়াবা মজুদ করা হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ সীমান্তবর্তী দেশের বিভিন্ন এলাকায়। পরবর্তীতে সেসব ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া প্রতিবেদনে বান্দরবানের ২০টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের কথা বলা হয়েছে। যে সব পয়েন্ট দিয়ে দেশে ইয়াবা ঢুকছে তা হলো, সীমান্তের ৭৩ নম্বর পিলারের থানচির তিন্দুর তুইখ্যা মুরংপাড়া, ৭০ নম্বর পিলারের হেডম্যান পাড়া, পুনিয়া পাড়া, চবাইজ মগপাড়া, ৬৮ নম্বর পিলারের সাপছড়া , অংরাই পাড়া উচিয়া, ৬৬ নম্বর পিলারের রুমা মানিকছড়ির চালুয়া, ৬৪ নম্বর পিলারের রুমা ডলুপাড়া আংটালং মুরং পাড়া, ৬২ নম্বর পিলার আলিকদমের রুহিতং নাগাহান এলাকা, ৫৮ নম্বর পিলারের আলিকদম পোয়া মুহুরী টাইটং পাহাড়, ছেদাবুরং পাড়া, ৫৬নম্বর পিলারের আলিকদম বুচিঢং তাংরামুরং পাড়া, নাইক্ষংছড়ির ৫১ নম্বর পিলারের দৌছড়ি নেরেখাইং, ৫০ নম্বর পিলারের লেমুছড়ি আমতলা, ৪৬ নম্বর পিলারের ফুলতলী অংথ্রাবে, ৪৩ নম্বর পিলারের নিকুছড়ি, চাকঢালা অংজাইং, ৪২ নম্বর পিলারের রেজুপাড়া আমতলি নারাই চং, ৪০ নম্বর পিলারের রেজু আমতলি নারাই চং, নাইক্ষংছড়ির ৩৭নম্বর পিলারের তুমব্রু, বাইশারি, আমবাগান কোকোডিংগা, ৩৪ নম্বর পিলারের পশ্চিম কুল, ডেকবুনিয়া, উত্তর পাড়া, ৩৩ নম্বর পিলারের পশ্চিমকুল, ৩২ নম্বর পিলারের ঘুনধুম কলাবাগান, পশ্চিমকূল ও ফকিরপাড়া এবং ৩১ নম্বর পিলারের ডেকবুনিয়া এলাকা উল্ল্যেখযোগ্য। নামুবাপ্র

 

পাঠকের মতামত: